21th July,2021,রমাকান্ত :- আজ একুশে জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবস। বিগত বছরগুলোর মতো লক্ষাধিক লোকের জমায়েত করে এবার শহীদ দিবস পালন করছে না অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। করোণা মহামারীর কারণে এই সিদ্ধান্ত বলে তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে। পরিবর্তে দেশের প্রায় ৮ টি রাজ্যের বেশি জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিনের সাহায্যে আজ দুপুর দুটো থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শোনানোর ব্যবস্থা করেছেন তৃণমূলের তাবড় তাবড় নেতৃত্বরা। সদ্য অনুষ্ঠিত 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে একক
সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
যে তৃণমূল 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে 18 টি আসন খোয়ালো আবার সেই তৃণমূলেই 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিজয় রথকে দমিত করে পুনরায় ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মসনদে আসীন হলেন যা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। এই 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে সাফল্য অর্জন করে বিজেপি গোটা বাংলায় যোগদান মেলা চালিয়েছিলেন যাতে করে তৃণমূলের বহু বিধায়ক বিজেপিতে যোগদান করেন। হাজারে হাজারে সাধারণ কর্মী থেকে নেতা প্রায় প্রতিদিন বিজেপিতে যোগদান শুরু করেন। আর বিজেপিও রাজ্য জয়ের স্বপ্নে মশগুল হয়ে ওঠেন।
মানসিকভাবে মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার হন তৃণমূলের প্রথম সারির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সহ দলের সুপ্রিমো অর্থাৎ সভানেত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজেই। বিধানসভা নির্বাচনের শেষের দিকে তাকে খুবই বিধ্বস্ত লাগছিল।
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ব্যাপক ভরাডুবির পর বহু সুযোগ সন্ধানী তৃণমূল নেতারা তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেন এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে উপর্যপুরি আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে থাকেন। তখন মাটি কামড়ে সংগঠন গোছাতে দেখা যায় প্রকৃত তৃণমূল কর্মীদেরেই। তারা সুদিনে তথাকথিত তৃণমূল নেতাদের বিভিন্ন অত্যাচারে দলের কাজ থেকে বসে গিয়েছেন কিন্তু দলের হাল ছাড়েননি আবার বিজেপিতেও যাননি। নিজেদের দলের নেতাদের দ্বারা বহু ভাবে লাঞ্ছিত হয়ে চোখের জল ফেলে জীবন যন্ত্রণায় ছটফট করলেও দলকে মনে-প্রাণে ভালোবেসে গিয়েছেন।
কিন্তু যখন 2019 এর লোকসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলে ভাঙন শুরু হয় তখন দেখা যায় যে সেই প্রথম সারির তৃণমূল নেতারাই দল ত্যাগ করে বিজেপিতে গেলেন।
বেশ কয়েক মাস সংগঠনের কাজ পুরোপুরি ভাবে স্তব্দ হল। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে। তারপর পিকের তত্ত্বাবধানে তৃণমূল নেত্রী পুরনো কর্মীদের দলে গ্রহণ করে উত্তরবঙ্গে দিদিকে বলো কর্মসূচির মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু করলেন। এরপরই শুরু হয় সাফল্যের জয়গান। ধীরে ধীরে উত্তরবঙ্গে বেদখল হয়ে যাওয়া সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত উদ্ধার করেন তৃণমূল কংগ্রেস। খুব দ্রুত রাজনৈতিক চরিত্র বদলাতে থাকে উত্তরবঙ্গে। শুরু হয় তৃণমূল কংগ্রেসের অভাবনীয় শ্রীবৃদ্ধি।
অবশেষে এলো 2021 এর বিধানসভা নির্বাচন। এই বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল এবং উত্তরবঙ্গের লোকসভার নিরিখে হেরে যাওয়া বহু বিধানসভার আসনে তারা জয় লাভ করলেন। একদিকে উত্তরবঙ্গের হারানো মাটি পুনরুদ্ধার করলেন এবং অপরদিকে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতাসীন হল তৃণমূল কংগ্রেস।
তৃণমূল কংগ্রেস পুনরায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসতেই আবারো রাজ্যজুড়ে দল পরিবর্তনের মেলা চলছে। এখন আবার বহু বিজেপি কর্মী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করছেন। যা নিয়ে তৃণমূলের অনেক কর্মীর মধ্যে ক্ষোভের ডানা বাঁধছে এবং তারা মনে করছেন যে হয়তো বিজেপি থেকে আসা এই পরিযায়ী তৃণমূলীদের ভিড়ে একদিন আবারও আগের ন্যায় প্রকৃত তৃণমূলীরা হারিয়ে যাবেন।
পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তাই অনেক প্রকৃত তৃণমূলপ্রেমী কর্মীরা,তৃণমূলের এই দেদার দল পরিবর্তনের প্রবণতায় আশঙ্কা প্রকাশ করে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পুরনো পোড় খাওয়া খাঁটি তৃণমূলীদেরেই যত্ন নেওয়ার কথা বলছেন তারা।
এখন দেখার পুরনো তৃণমূল কর্মীরা পুনরায় ব্রাত্য থাকবেন না নবাগতরা এসে দলে প্রতিপত্তি বিস্তার করবেন ?