কোচবিহারে তৃনমূলের সাফল্যে আজও কেন সমান তালে প্রাসঙ্গিক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ? বিশ্বদেব চট্টপাধ্যায়ের কলমে--


কোচবিহারে তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ফেরাতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ধারেকাছে কেউ নেই !!
কোচবিহারের রবি-বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন হুক্কাহুয়া রবে আমাকে রবি ঘোষের চামচা দালাল ইত্যাদি বিশেষণে  সম্ভাষণ করতেই পারেন--অনেকেই করেও থাকেন। আমার জন্যে কখনো দলীয় টিকিট বা পদের জন্যে তাকে কোথাও তদবির করতে হয় নি। কিছু পাইয়ে দেওয়ার কথাও কখনো ভাবতে হয় নি। এমন কী এমএ-তে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, এমফিল ও বিএড-এ প্রথম শ্রেণী পাওয়া আমার মেয়ের চাকরির জন্যে রবিবাবু এসএসসি, সেট, পিএসসি’র প্যানেলে নাম তোলার জন্যে কোথাও কোনো তদবির করে থাকলে তা প্রমাণ করার চেষ্টা যে কেউ করতে পারেন--বিশেষ করে যারা আমাকে রবিবাবুর চামচা বা দালাল চিহ্নিত করে আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকেন তারা চেষ্টা করতে পারেন--করা উচিত। তবে রবিবাবু নন--অন্য কেউ লেনদেনের প্রস্তাব তার চামচে মাধ্যমে পাঠিয়ে ছিলেন--আমি প্রত্যাখ্যান করায় যথেষ্ট ক্ষতি শিকার করতে হচ্ছে আমাকে--সময়মতো বিস্তারিত লিখব একদিন। 
 ২০১৯-এর লোকসভা  নির্বাচনে রবিবাবুর প্রস্তাবিত প্রার্থীকে মমতা সিলমোহর দেওয়ার ফল ভাল হয় নি দলীয় বিভীষণদের একাংশের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনৈতিক অন্তর্ঘাতের কারণে। দলীয় প্রার্থী পরেশ অধিকারী হেরে যাওয়ার দায় পুরোপুরি চাপিয়ে দেওয়া হয় রবিবাবুর কাঁধে। বিভীষণদের বিস্ময়করভাবে প্রোৎসাহিত করা শুরু হল। রবিবাবুর চেয়ে অনেক বেশি ভোটে নিজের নিজের কেন্দ্রে হেরেও অনেককেই যেখানে পদ হারাতে হয় নি সেখানে রবিবাবুকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জেলাসভাপতির পদ থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হল ! রবি ঘোষ কি ভাবে জেলায় শূন্য থেকে ৯-এর মধ্যে ৮-টি বিধানসভা এবং পরপর দু’বার লোকসভার প্রার্থীকে জিতিয়েছিলেন সে ইতিহাস সবাই জানেন--শুধু বেজায় উচ্চাকাঙ্খী কৃতঘ্নরা তা স্বীকার করে না--কারণ, তাদের রাজনৈতিক একমাত্র  লক্ষ্যই হল রবিবিরোধিতা--যার চড়া মাশুল গুণতে হল দলকে !
লোকসভা নির্বাচনের পরপরই আমি লিখেছিলাম--রবি ঘোষকে হটানোর মারাত্মক ফল ভুগতে হবে দলকে--আট থেকে দু’য়ে নেমে যাবে বিধায়ক সংখ্যা। উত্তরবঙ্গে কোনো জেলাতেই তথাকথিত রাজবংশী মুখ বলে কাউকে খেলতে নামালেই রাজবংশীরা দলে দলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে ভোট দেয় না। দিলে অতুল রায়, বংশীবদন, অনন্ত রায়রাই উত্তরের ৫৪-টি আসন দখল করতে পারতেন। আজ পর্যন্ত তা সম্ভব হয় নি। রাজবংশী সম্প্রদায় রাজনীতি না বুঝে ভোট দেয় না--তারা সবকিছু জেনে বুঝেই ভোট দিয়ে থাকে বলেই কোচবিহারে পার্থপ্রতিম, বিনয় বর্মণ বা গিরীন বর্মণেকে রাজবংশীমুখ হিসেবে রাজনৈতিক বিচারে একেবারেই গ্রহণযোগ্য মনে করে নি। ফলে তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা এক ধাক্কায় ৮থেকে দু’য়ে নেমে এল। এই বিপর্যয়ের দায় কার বা কাদের তা জেলাবাসী মাত্রেই জানেন--কিন্তু দলের রাজ্য নেতারা কি তা জানেন বা জানার চেষ্টা করছেন? রবিবাবু রাজবংশী নন--কিন্তু রাজবংশী ভোটারদের মধ্যে তাঁর যতটা রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার চার আনাও এই মুহূর্তে দলের আর কারুর নেই। গত লোকসভা নির্বাচনে রবিবাবুর প্রস্তাবিত প্রার্থীকে স্বয়ং দলনেত্রী কতটা গুরুত্ব দেন তা বোঝা গেল বিধানসভা নির্বাচনে মেখলিগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধানকে সরিয়ে পরেশ অধিকারীকে টিকিট দেওয়া এবং জেতার পর মন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে। বর্তমান জেলাসভাপতি লজ্জাজনকভাবে হারলেন--হারলেন বিনয় বর্মণও--কেন এই হার--কেন এই নিদারুণ লজ্জাজনক বিপর্যয় নেমে এল তা কিন্তু বিন্দুমাত্র অস্পষ্ট নয়। রবিবাবুও তার নাটাবাড়ি কেন্দ্রে হেরেছেন--সে হার নিশ্চিত হয়েছে অন্তর্ঘাতের কারণেই। মিহিরবাবু জানেন তিনি কেন এবং কাদের সৌজন্যে নাটাবাড়ি কেন্দ্রে বিজেপি বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হলেন !
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী কোচবিহার থেকে জিতবেন কিনা তা এখনই বলা খুব কঠিন--কিন্তু  দলের খোলনলচের যদি আমূল পরিবর্তন না হয় তাহলে সম্মানজনক লড়াইটাও করার জায়গায় থাকবে না তৃণমূল। সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার লাভ ও সম্প্রদায়গত জাতপাতগত গ্রহণযোগ্যতার লাভ একইরকম কখনো হয় নি--কখনো হবেও না। তাই পার্থ-বিনয়-গিরীনবাবুদের চেয়ে জেলা রাজনীতিতে রবিবাবুর  রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার মূল্য অনেক বেশি--বারবার তা প্রমাণিত হয়েছে--তবু সবচেয়ে বেশি অবিচারের শিকার হতে হয়েছে তাঁকেই ! দলের প্রতি রবিবাবুর সন্দেহাতীত একনিষ্ঠতা এবং কঠোর পরিশ্রম সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বাজে মন্তব্য তারাই করে থাকে যাদের নিজেদের লজ্জাজনক অপদার্থতা আড়াল করার মতো কোনো আবরণই হাতে থাকে না। মানুষ সবই বোঝে--অপপ্রচার কুৎসা এবং নীতি ও আদর্শহীন বিরোধিতা তো তার বিরুদ্ধেই সঙ্ঘটিত হয় যার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকে না--সেটা তো প্রমাণিত হয় বিধানসভা নির্বচনের মতো নির্বাচনের ফলাফল যখন সামনে উঠে আসে তখনই। ক্ষমতালিপ্সারও একটা যোগ্যতা থাকা দরকার--প্রশ্ন হল--রবিবিরোধী নেতাদের মধ্যে কি তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে? সামনেই পুরসভা নির্বাচন, তার আগে দিনহাটায় উপনির্বাচন এবং দেখতে দেখতে এসে যাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা নির্বাচন--শিবহীন (রবিহীন) যজ্ঞের ঝুঁকি দলনেত্রী নেবেন কিনা সেটাই এখন দেখার। নিলে তা লোকসভা নির্বাচনের পরের সিদ্ধান্তের  মতোই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে সন্দেহ নেই !!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য দিন

নবীনতর পূর্বতন