কেরলে কুস্তি এবং পশ্চিমবঙ্গে দোস্তি
সম্প্রতি শেষ হল সিপিআই(এম) দলের ২৩তম সর্বভারতীয় সম্মেলন। এই সম্মেলনে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) বাদে অন্যান্য বামপন্থী দল সমূহকে আমন্ত্রণ করলেও কোন দলই উপস্থিত হয় নি। সংবাদে প্রকাশ, নানা কারণে উপস্থিত না থাকলেও তাঁরা শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন।
সম্মেলনে বিজেপি বিরোধী বাম ও গণতান্ত্রিক ঐক্যের কথা প্রস্তাবিত হয়েছে। এই ঐক্যকে বৃহত্তর করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে । বেশ কিছুদিন হল লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কংগ্রেসকে তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দল হিসাবে মূল্যায়ন করে বৃহত্তর বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যে যুক্ত করার কথা বলছেন। এজন্য কংগ্রেস সহ কিছু আঞ্চলিক দলকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ঘর সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি কংগ্রেসের ছন্নছাড়া দশায় প্রকাশ করে সমালোচনাও করেছেন।
অথচ এক সময় দীর্ঘ কংগ্রেসী অপশাসনের বিরুদ্ধে দেওয়ালে দেওয়ালে এঁকেছিলেন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রক্তমাখা হাতের ছবি। উঠতে বসতে প্রায় প্রতিটি কথাতেই '৭২ সালের কংগ্রেসের অত্যাচার ও খুনের ফিরিস্তি দিতেন। ছড়ায় ছড়ায় জনসাধারণের মনে গেঁথে দিয়েছিলেন 'কংগ্রেসের তিনটি গুণ / দুর্নীতি, ধর্ষণ, মানুষ খুন’ অথবা 'গলি গলি মে শোর হ্যায় / রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়'। এসব আজ অতীত। সেদিন ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণির বিশ্বস্ত দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যতটুকু আন্দোলন গড়ে তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরায় নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আজ সেই কংগ্রেসের সঙ্গে দোস্তি করছেন। এতে বামপন্থী নামাবলীর আলখাল্লাটাও খুলে পড়ছে।
অবশ্য এ অবস্থায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে কেরল নিয়ে। এই রাজ্যে সিপিআই(এম) ক্ষমতায় থাকার কারণে পরিষদীয় স্বার্থে কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্যের প্রয়োজন নেই মনে করছেন রাজ্য নেতারা । তাই সেখানে ঐক্যবিরোধী যেমন একদল নেতা-নেত্রী রয়েছেন, তেমনি কংগ্রেসের সঙ্গে সিপি আই(এম)-এর কোন সু-সম্পর্ক নেই। এই সম্মেলনেও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন মন্তব্য করেছেন, বিজেপি আর কংগ্রেস একই আর্থিক নীতি মেনে চলে।
তাই আমজনতা দেখছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিআই(এম)-এর কেরলে কুস্তি এবং পশ্চিমবঙ্গে দোস্তি।