"একা আন্দোলন করে কিছু হবে না" অকর্মণ্য, স্বার্থপর,বেইমান,অসামাজিক,অলসদের নিত্য বুলি। সঞ্চালকের কলমে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটা কথা আমাদের সব সময় নাড়া দেয়। তা হল , "শরীরম ব্যাধি মন্দিরম।" অর্থাৎ শরীর যখন আছে তখন ব্যাধি থাকবেই। আর তাই সমস্যা যখন আছে ঠিক তেমনি সমাধানও থাকবে। 

জনসংখ্যার বিচারে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র হল আমাদের এই ভারতবর্ষ। পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়া এবং আমাদের ভারত বর্ষ এই এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত। এজন্য আমরা নিশ্চয়ই গর্ববোধ অনুভব করি। সংসারে যেমন সুখ দুঃখ থাকে,তেমনি আমাদের ভারত বর্ষ হল আমাদের বৃহত্তর পরিবার। পারিবারিক সংসারেও আমাদের সুখ দুঃখ থাকবে। 

পারিবারিক সমস্যা সমাধানে যেমন সংসার এর অন্তর্গত কোন প্রতিনিধিকে তা সমাধানে এগিয়ে আসতে হয় ঠিক তেমনি দেশ বা রাষ্ট্রের কোন সমস্যা হলে সেই সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে দেশের জনগণকে। এই এগিয়ে আসার বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে একটি অন্যতম মাধ্যম হল আন্দোলন বা প্রতিবাদ। 

দেশের সমস্যা বা রাজ্যের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসে উদ্যোগ গ্রহণ করাটাকেই প্রতিবাদ বা আন্দোলন বলা হয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেমন আন্দোলনে সামিল হয় ঠিক তেমনি একই দাবিতে রাস্তায় সামিল হয় দেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী অগণিত জনতাও।

কিন্তু আমাদের দেশে একটা ধারণা বদ্ধমূল আছে যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে পারে। এক জন বা দু জন বা তারও বেশি অর্থাৎ ততোধিক জনগণের আন্দোলনের থেকে জনপ্রতিনিধির আন্দোলনই অনেকটা শক্তিশালী। এই ধারণা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা।

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কখনো কখনো জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে আর তাতে ভোগান্তির শিকার হয় দেশের কোটি কোটি সাধারণ নাগরিক। 

ভারতবর্ষের ইতিহাসে এমনও দেখা গিয়েছে যে জনপ্রতিনিধি হয়ে তথাকথিত জনসেবকরা জনগণের সমস্যা সমাধানের চাইতে নিজেদের সমস্যা সমাধানে অনেকটা অগ্রসর হয়ে থাকেন।

এই যে ধরুন এম.এল.এ ,এমপি ভাতা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন। এইরকম একজন জনপ্রতিনিধির সুযোগ-সুবিধা এবং বেতনের কথা শুনলে আপনাদের মাথা ঘুরে যাবে।

সময় যত এগোচ্ছে ততই দেশজুড়ে সমস্যা মারাত্মকভাবে ডানা বাঁধছে। যত দিন যাচ্ছে সবকিছু উন্নতি হলেও বেকারদের কোন উন্নতি হচ্ছে না। বেকারদের কর্মসংস্থান আশানুরূপ হচ্ছে না। যে পরিমাণ জনসংখ্যা তার সিকি অংশও জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না। 

আমাদের বাংলায় যেমন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক এবং হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে। কেন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় না ? কেন বারবার মামলার পাহাড়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যাচ্ছে ? নিজের ভুলগুলো সংশোধন করে করে কেন স্বচ্ছভাবে মেধা তালিকা প্রকাশ করা যায় না। এই সমস্ত হাজারো প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে গিয়ে অনেকেই মারাত্মকভাবে রাজনৈতিক প্রতিনিধি মারফৎ হেনস্তার শিকার হন ? কিন্তু তাই বলে কি আন্দোলন থমকে থাকে ? শিক্ষিত বেকারেরা নিরন্তর আন্দোলন করে যাচ্ছে।
আন্দোলনের পাশাপাশি তারা কোর্টেরও দ্বারস্থ হচ্ছে। তাই অস্বচ্ছতার অভাবে বারবার থমকে যাচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া।

এখানে গুটি কয়েক ছাত্রছাত্রী প্রাণ বাজি রেখে আন্দোলন করে যাচ্ছেন আর সেই আন্দোলনের ফলাফল ভোগ করছেন আন্দোলনরত ছাত্র ছাত্রী সহ আন্দোলন বিরত ছাত্র ছাত্রীরাও। অর্থাৎ আন্দোলনের ফল সবাই ভোগ করে আর ঘুষের ফল ভোগ করে ওই ঘুষ প্রদান কারী ছাত্র বা ছাত্রীটিই।

প্রাথমিক স্তরে দীর্ঘ উনিশ বছর সংগ্রাম করে পুন:রায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিতে ইংরেজি চালু করেছে এস.ইউ.সি.আই এর ধারাবাহিক আন্দোলন। কিন্তু এর সুফল ভোগ করছে রাজ্যের সর্বস্তরের জনতা। যে কাজটা একটা রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিদের করা উচিত ছিল সেটা করছে সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

জনস্বার্থ বিরোধী তিনটি কৃষি আইন এর বিরুদ্ধে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে 7 মাস অতিক্রান্ত হয়েছে কৃষকদের আন্দোলন। কোন জন প্রতিনিধিকে এর বিরুদ্ধে তেমন একটা সুর চড়াতে দেখা যায়নি। সুর চড়িয়েছেন একমাত্র ভুক্তভোগী সাধারণ কৃষকেরা। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ লাগাতার কৃষক আন্দোলনই পারে কৃষক স্বার্থবিরোধী এই তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে।

আন্দোলন করে দাবি আদায়ের এইরকম ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত আপনাদের সামনে উপস্থাপন করে শেষ করা যাবেনা।

তাহলে কোন স্বার্থপর, আহাম্মক, অসামাজিক ব্যক্তিরা বলে আন্দোলন করে কিছু হয় না ?

আন্দোলন প্রথমে একা বা গুটি কয়েক জন নিয়ে শুরু করতে হয়। পরবর্তীতে সময়ের তালে তালে আন্দোলনে ভিড় জমায় সাধারন জনতা এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ধীরে ধীরে বড় কোনো দাবি আদায় করতে বেশি সময় নেয় না, যে সময় নেয় জনপ্রতিনিধির নামে তথাকথিত সেই  মূর্খরা !

রমাকান্ত সরকার, সঞ্চালক, সেবা বিনোদন



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য দিন

নবীনতর পূর্বতন