করোনা ভাইরাস সংক্রমণ - একটি ভিন্ন প্রতিবেদন (Coronavirus Ekti Vinno Pratibedan)

 


করোনা ভাইরাস সংক্রমণ - একটি ভিন্ন প্রতিবেদন

প্রাক্ কথন

পৃথিবী জুড়েই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। আক্রমণের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি মৃতের সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। 'আতঙ্ক হবেন না, আতঙ্ক ছড়াবেন না, রোগের বিরুদ্ধে লড়াই, রোগীর বিরুদ্ধে নয়' - এসব বলেও মানুষের মনে যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করা যাচ্ছে না।

একদিকে যেমন করোনা অতিমাড়িতে সমস্ত দেশ ভুগছে, অপরদিকে করোনা সংক্রমণ ও তা নিরসনের সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা বিতর্কও দেখা দিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, করোনা সংক্রান্ত এযাবত প্রকাশিত তথ্যগুলোর ভিত্তিতে 'করোনা ভাইরাস সংক্রমণ -একটি ভিন্ন প্রতিবেদন' প্রকাশ করা হল। এই প্রতিবেদনে বর্তমান করোনা অতিমারী সংক্রমণ সম্পর্কে ধারণা পেতে সাহায্য করলে এ প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে বলে আশা করি।


সন্ধানী চক্রবর্তী

২৫ই নভেম্বর 2021




পর্ব - ১

নভেল করোনা ভাইরাস

মানুষসহ জীবজগতের বহু প্রাণী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে আবহমানকাল ধরে বসবাস করছে। বিজ্ঞান যত এগোচ্ছে ক্রমাগত তাদের সম্পর্কে জানতে পারছি। কেউ কেউ মনে করেন, শুধু ভাইরাসের সংখ্যা পৃথিবীতে কুড়ি হাজারের অধিক বিদ্যমান। আমরা এ পর্যন্ত ৩/৪ শত ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছি, এদের প্রকৃতি সম্বন্ধে জেনেছি। কিছু ক্ষেত্রে এদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে । আমাদের অজান্তেই মানব দেহ এবং প্রাণী জগৎ-ও এদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে আছে। ভবিষ্যতে আমরা এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব। সম্ভবত এদের ক্ষতিকারক আক্রমণ থেকে প্রাণীজগৎ রক্ষাও পাবে।

আজ পর্যন্ত নভেল করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা হলেও এর উৎপত্তি, আক্রমনতা এবং রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে সর্বসম্মত বা সর্বজন গ্রাহ্য কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

সে যাই হোক, আজ থেকে ৫৬ বছর আগেই মানবদেহে করোনাভাইরাসটিকে প্রথম সনাক্ত করেছিলেন 'জুন আলমেইডা' নামে একজন স্কটিশ মহিলা চিকিৎসক-গবেষক। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে প্রথম এই ভাইরাসটিকে তিনি শনাক্ত করেন। এ খবর বিশিষ্ট চিকিৎসা সংক্রান্ত লেখক জর্জ উইন্টার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বি বি সি-কে জানান।

এরপর সর্দি-কাশি নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত থাকা ডেভিড  টাইরেল লক্ষ্য করলেন, সাধারণ সর্দি-কাশির কয়েকটি লক্ষণ স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে তৈরি করতে পারলেও কোষের ভিতরে আর বেড়ে উঠতে পারে না। টাইরেল বিদ্যুৎ মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করে দেখার জন্য জুন আলমেইডার কাছে পাঠান। গবেষণার পর জুন জানিয়ে দেন - ভাইরাস গুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো হলেও আসলে তা নয়। নতুন ভাইরাস কে চিহ্নিত করা হল 'বি-৮১৪' নামে। ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশ জার্নালে বিষয়টি প্রকাশিত হয়। দুই বছর বাদে 'জেনারেল ভাইরোলজি জার্নালে'প্রথম ছবি প্রকাশিত হয়। জর্জ উইন্টার দাবী করেন, চিকিৎসক টাইরেল, জুন আলমেইডা ও লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা টনি ওয়াটারসন নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছিলেন 'করোনাভাইরাস' তার কারণ ভাইরাসের চারপাশ জুড়ে অনেকটা মুকুটের মত সাদৃশ্য ছিল।

এ তো গেল অনেক আগের কথা। সম্প্রতি এ নিয়ে কি বলা হয়েছে, সেটা দেখে নেওয়া যাক।

এই ভাইরাসটি আসলে বিশাল আর এন এ ভাইরাস দলের সদস্য, যার নাম করোনা। করোনার অনেক প্রজাতি আছে, যার মধ্যে সাতটি প্রজাতির মানুষের দেহে রোগ সংক্রমণ করতে পারে। এদের মধ্যে চারটি সারা বছর ধরে অত্যন্ত সাধারণ হাঁচি, কাশি, সর্দি উপসর্গ সৃষ্টি করে। এরা হল ১) 229E (আলফা করোনাভাইরাস) 2) NL63 (আলফা করোনাভাইরাস) 3) OC43 (বিটা করোনাভাইরাস) 4) HKUI (বিটা করোনাভাইরাস)।

এছাড়া আছে মার্স কভ (MERS COV)- এটা একটা বিটা করোনাভাইরাস। আরেকটি হলো সার্স কভ (SERS COV) ২০০৩ সালে চীনে এর প্রাদুর্ভাব ঘাটে। তখন তাকে সার্স ভাইরাস বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে চীন এ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায়, তখন এর নাম রাখে 'সার্স কভ-২'। বিজ্ঞান জগতে এই নামই চলছে।

এই সার্স কভ-২ হল করোনাভাইরাস। নতুন বলে একে 'নভেল করোনা' বলা হয়েছে। এর আরেকটি নাম হল 2019-N COV.


ক্রমশ: 




(লেখক সন্ধানী চক্রবর্তী, মতামত নিজস্ব)



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য দিন

নবীনতর পূর্বতন